3.00 এর নিচে সিজিপিএ নিয়ে মাস্টার্সে ফান্ড সিকিউর করা!


আজকের টপিক 3.00 এর নিচে সিজিপিএ নিয়ে মাস্টার্সে ফান্ড সিকিউর করাঃ Strategies, approaches, mindset and the journey.

সতর্কতাঃ লেখাটা লম্বা। পড়তে পড়তে ঘাড় ব্যাথা করলে আমি দায়ী নই। একবসায় লেখা তাই বানান ভুল, বাক্যের অসংগতির জন্য ক্ষমাপ্রার্থী। ব্যক্তিগত কথা পড়তে মানুষের বিরক্ত লাগে জানি তবে পুরো ব্যাপারটা বুঝাতে লেখা লাগল। ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। ///

উপরের শিরোনামটা খুব সহজে লিখে ফেলা গেলো। কিন্তু আজকে যে স্টোরি টা লিখব সেই যাত্রাটা খুব সহজ ছিলনা। আজ ইউএসএতে মাস্টার্স প্রোগ্রামে ক্লাস শুরুর পর আমার ফার্স্ট উইকেন্ড। এইতো ফল’২২ এই আমি এসেছি Saint Louis University, Missouri তে MS in GIScience এ ফুল ফান্ড সহ। আজ উইকেন্ডে আশেপাশের নতুন ছাত্ররা গিয়েছে ইউনিভার্সিটির একটা রিক্রিয়েশন ইভেন্টে। বাসায় বসে ভাবছিলাম ব্যক্তিগত কাজের পাশাপাশি কী করা যায়। তাই এখানে আসতে চাওয়া ভাইবোন যাদের সিজিপিএ ৩ এর কম তাদের জন্য লম্বা লিখাটা লিখেই ফেললাম। এতদিন লিখব লিখব করে লেখা হচ্ছিল না।

২০১৮ সালের অক্টোবরে ব্যাচেলরসে ২.৯১ সিজিপিএ নিয়ে যখন বুয়েট থেকে বের হই তখন বিদেশে উচ্চশিক্ষার কোন পরিকল্পনা ও ইচ্ছাই আমার ছিলনা। বিসিএসের একটা ডাইজেস্ট কিনেছিলাম যা কখনো পড়া হয়নি। ইতোমধ্যে আমি বিবাহিত ও এক বাচ্চার বাপ। টিউশনিতে লেগে গেলাম কিছু নগদ টাকা কামাতে। সরকারি চাকরির কোন ইচ্ছাই ছিলনা। বেসরকারি তে জয়েন করার মত পরিস্থিতি ছিলনা।

২০১৯ এর ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত টিউশনি করলাম। সম্ভবত মার্চ কিংবা এপ্রিলে রাজশাহী চলে গেলাম ওয়াইফ এর ইন্টার্নশিপের জন্য। সেখানে মেয়েকে দেখাশোনা প্লাস পার্টটাইম অনলাইন জব করলাম এক বছর। পাশাপাশি কনটেন্ট রাইটিং ও এফিলিয়েট মার্কেটিং এও চেষ্টা করলাম ক্যারিয়ার সুইচের। বাট একটা হঠাত ঝামেলায় ওসব বাদ দিয়ে দিলাম। কিছুটা হতাশও ছিলাম।

২০২০ এর কোভিডের শুরুতে নিজ বাড়ি ময়মনসিংহে চলে আসলাম। ভাবতে লাগলাম কী করা যায়। নিজের লো সিজিপিএ নিয়ে সবসময় একটা হতাশা কাজ করত। মনে হত কী ছিলাম আর কী হলাম। তাই ভাবছিলাম ভালোভাবে পড়াশোনা করে আবার কনফিডেন্স বাড়াতে হবে। এসময় এক শুভাকাঙ্ক্ষী ভাইয়ের পরামর্শে ইউরোপে উচ্চশিক্ষার জন্য যাওয়ার মনস্থির করলাম। সুইডেনের SI scholarship এর জন্য ট্রাই করার নিয়ত করলাম যদিও আমার কোন রেলেভেন্ট জব এক্সপেরিয়েন্স ছিলনা। কিন্তু ঐ ভাই সুইডেনে থাকতেন বলে ট্রাই করলাম। একদিক থেকে চিন্তা করলে এটা ভুল সিদ্ধান্ত ছিল কারণ রেলেভেন্ট জব এক্সপেরিয়েন্স ছাড়া স্কলারশিপ পেতে আমার উচিত ছিল USA তে ট্রাই করা। তবে আমার আক্ষেপ নেই এজন্যে যে অন্তত আমি কিছু একটা শুরু করে আগাচ্ছিলাম। থেমে থাকিনি কখনো। তবে লো সিজিপিএ যাদের আমি বলব স্কলারশীপের জন্য ইউরোপ ট্রাই না করে ইউএসেতেই ট্রাই করতে।

এ যাত্রায় প্রথম স্টেপ ছিল আইয়েলস দেয়া। আমার প্রোফাইল স্ট্রং করার এই ছিল প্রথম সুযোগ। নভেম্বর’২০ এ আইয়েলস দিলাম। আইয়েলসে ৮ তুললাম। এস আই স্কলারশিপের জন্য প্রোফাইল তৈরি করলাম। প্রচুর খাটাখাটনি করলাম। এমনকি ভলান্টিয়ারিংও করলাম বিভিন্ন অর্গানাইজেশনে নতুন করে।সুইডেনের ইউনিগুলোতে এপ্লাই করলাম। লুন্ড ইউনিভার্সিটি (টপ হান্ড্রেড) তে এডমিশন ও পেলাম। কিন্তু শেষ নাগাদ স্ক্লারশিপ টা হলনা। তখন এমন সময় চলে এসেছে যে ইউএসেতে ২১ এর ফল ধরবার মত টাইম ও নাই। ইতোমধ্যে জিয়ারি পড়া শুরু করেছিলাম। হঠাত লকডাউন পড়ল। সাথে পড়াশোনায় ছেদ। তবে ভালো প্রেপ ছিল। কিন্তু হঠাত একদিন শুনি ঈদের আগে জুলাই ১৫ তারিখ লকডাউন সরে যাবে। আর ঠিক ঐদিনই জিয়ারি এক্সাম। ফজরের ওয়াক্তে ময়মনসিংহ থেকে রওনা দিয়ে ৪ ঘন্টায় আমেরিকান এলাম্নাই অফিসে পৌছে ৪ ঘন্টার পরীক্ষাটা দিলাম। আশানুরুপ ফল হলোনা। আসলে জীবনে সবকিছু আশা অনুযায়ী হয়না এ কথাটা মেনে নিতে হবে। এক্সপেক্টেশন ছিল ৩২৫ এর মত আর পেলাম ৩১১ (রাইটিং-৪) । তাই মনে হল আমার প্রোফাইল এ স্কোর দিয়ে খুব স্ট্রং হয়নি। ২১ এর ফলে এপ্লাই করিনি; করার সময়ও ছিলনা। ২২ এর স্প্রিং এ কেবল একটা ইউনিতে (West Virginia University) এপ্লাই করেছিলাম যেখানে প্রফেসর আমাকে নেয়ার ব্যাপারে ফুল পজিটিভ ছিল। কিন্তু আল্লাহর ইচ্ছা এমন যে এডমিশন কমিটি আমাকে এডমিশন ই দিলনা। বাট ঐ ভার্সিটির প্রফ মোটিভেশন দিয়ে বল্ল তুমি যেহেতু লুন্ডে এডমিশন পেয়েছো অন্য জায়গাতেও পাবে। ট্রাই করতে থাকো। আবার আশায় বুক বাধলাম।

এরপর শুরু হল আমার নতুন যাত্রা। ফল ২২ কে টার্গেট করলাম। আর কীভাবে প্রোফাইল এনরিচ করা যায় ভাবতে লাগলাম। হাতে অনেক সময় ছিল যেহেতু অনলাইনে পার্টটাইম কাজ করতাম।


এ সময়ে যা যা করিঃ

১। ইমেইল করা শুরু করি নতুন উদ্যমে। মার্চ পর্যন্ত এরাউন্ড ২৫০ টা ইমেইল করি প্রফেসরদের। 

২। বারবার SOP রিভিশন করি। ভাইদের থেকে রিভিউ নিয়ে এসওপির উপর কাজ করি। পাশাপাশি আমি আমার জুনিয়রদের SOP review করে আমার ফিডব্যাক দিতাম যা আমার নিজের এসওপি সাজাতেও ভূমিকা রেখেছে।

৩। পজিটিভ রিপ্লাই যেসব ইউনিভার্সিটি/প্রফ থেকে পাই ওদেরকে টার্গেট করে নতুন করে এসওপি সাজাই।

৪। আন্ডারগ্র্যাডের থিসিস টা প্রথম একটা জার্নালে দেই। রিজেক্ট হলে পরে একটা কনফারেন্সে দেই। ফেব্রুয়ারিতে পাব্লিশ হয়। তবে এর আগেই সিভিতে ওটা যে রিভিউ তে আছে বা এপ্রুভড এসব উল্লেখ করে সিভি আপডেট রাখি।

৫। স্কিল ডেভেলপমেন্টে প্রচুর সময় ব্যয় করি। বিশেষ করে, পাইথন, স্ট্যাটিস্টিক্স, মেশিন লার্নিং, GIS, এসবে উন্নতি করার চেষ্টা করি। বেশ কিছু প্রজেক্ট করি। নিজের পোর্টফলিও সাজাই। আমার পোর্টফলিও যে খুব সুন্দর ছিল তা নয় বাট চেষ্টা করেছি নিজের কিছু কাজকে অনলাইনে আপলোড ও আপডেট করে রাখতে। যদি পোর্টফলিও সম্পর্কে আইডিয়া দরকার হয় তবে আমার টা দেখতে পারেন এই লিংকেঃ sites.google.com/view/skmuhammadasif

৬। সব যখন গুছানো তখন এ বছর শুরুতে ফুল টাইম জবে একটা সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কনসাল্টেন্সি ফার্মে এসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে ঢুকি। এখানকার কিছু এক্সপেরিয়েন্সও শো করা গিয়েছে ফান্ডিং ইন্টারভিউ তে।


পোর্টফলিও ওয়েবসাইটের গুরুত্বঃ

আমি প্রোফাইল উন্নয়নে যা করেছি এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল পোর্টফোলিও। অন্তত ৫/৬ জন প্রফেসর আমার প্রোফাইলের/কাজের উচ্ছসিত প্রশংসা করেছেন এবং আমাকে তাদের আন্ডারে নিতে চেয়েছেন। আমি কখনো আশা করিনাই এই প্রোফাইল দিয়ে আমি ৬ জন প্রফেসরের কাছে ইন্টারভিউ দিব। এরমধ্যে ৪ জন আমাকে সরাসরি বলেছে তারা আমাকে নিতে চায় বাকিরাও অনেকটাই পজিটিভ ছিল। এ চারটি ইউনিভার্সিটির মধ্যে ১ টিতে (New Orleans) WES evaluation চাওয়ায় (যা আমার ছিলনা) ও একটিতে (UCF) পিএচডি টপিকে ইন্টারেস্ট হারিয়ে ফেলায় আর এপ্লাই করিনাই। বাকি ১ টিতে (University of Connecticut) সিজিপিএ ৩ এর নিচে হওয়ায় প্রফেসর অনেক ইচ্ছা থাকায়ও নিতে পারেনি। তিনি ইভেন আমাকে নিতে না পারায় পরে এপোলজিও প্রকাশ করেছেন। বাকি ১ টি ইউনিতে (Saint Louis Uni) আমি ফান্ডিং পেয়েছি যেখানে জিয়ারি রিকুয়ারমেন্ট ছিলনা। ইন্টারেস্টিংলি এই প্রোগ্রামটাই ছিল আমার সবচেয়ে প্রিয় এবং এটাতে ফান্ড পাওয়াই সবচেয়ে কঠিন মনে হচ্ছিল।


পেপার পাব্লিকেশনের গুরুত্বঃ

যাদের সিজিপিএ লো তাদের বলব ভালো SOP,LOR এর পাশাপাশি আপনার সবেচেয়ে বড় স্ট্রেংথ হতে পারে একটি পেপার (অন্তত কনফারেন্স) এবং স্কিলসেট (অন্তত প্রোগ্রামিং বা আপনার ফিল্ড রিলেটেড কিছু )। আন্ডারগ্র্যাডের মতই একই ধরণের টপিকে যদি মাস্টার্সে কাজ করতে চান তবে পাব্লিকেশন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই পাব্লিকেশন দিয়ে আপনি যদি প্রফেসর কে রিচ করেন তবে যত ভাল রেস্পন্স পাবেন তা আর কোনটাতেই পাবেন না। আমি আমার আন্ডারগ্র্যাড রিলেটেড কাজে নক দিয়ে খুব ভালো রেস্পন্স পেয়েছি যেহেতু পাব্লিকেশন ছিল। কিন্তু পরবর্তীতে আমার ক্ষেত্রে আন্ডারগ্র্যাড থিসিস থেকে ইন্টারেস্ট শিফট হয়ে গিয়েছিল। তাই আর ওসব জায়গায় এপ্লাই করিনি। তারপরেও এটলিস্ট পাব্লিকেশন টা একটা গ্রেট ভ্যালু এড করেছে।


ফান্ড ও প্রফেসর খোজার কিছু ভালো প্লাটফর্মঃ

অনেকেই জানে তারপরেও বলি।

১। টুইটার (আপনি যদি এখানে না থাকেন তবে দ্রুত এক্টিভ হোন ও আপনার ফিল্ডের প্রফদের ফলো করুন। পিওর গোল্ড মাইন)

২। লিংকডিন (ফেসবুক কমিয়ে এখানে একটু সময় দিন)

৩। ফেসবুক গ্রুপ আছে কিছু যেমন এ গ্রুপ। (ফেসবুকে থাকলে এসবে নিয়মিত ঢু মারুন)

৪। সিনিয়র/জুনিয়র যারা ইতোমধ্যে বিভিন্ন ইউনিতে আছে তাদের কাছে জিজ্ঞেস করা ঐ ইউনিভার্সিটির ঐ ডিপ্টের ব্যাপারে। (তবে তারা ব্যস্ত থাকে ব্যাপারটা কন্সিডার করুন)

৫। AGU (for water,geography, environment)। অন্যান্য ফিল্ডেরও এমন কিছু থাকার কথা।

আমি প্রতিটি প্লাটফর্মেই এক্টিভ ছিলাম। আমি শুধু কিছু স্পেসিফিক ইউনিভার্সিটি না দেখে প্রফেসর ও তাদের কাজ দেখেছি এবং ইমেইল করেছি। মূলত বিভিন্ন প্লাটফর্ম থেকেই এসব থেকে নিউজ পেয়েই। ২৫০ ইমেইলের মধ্যে অন্তত ৬০/৭০ টা রিপ্লাই পেয়েছি। এরমধ্যে মোটামুটী রিপ্লাই ছিল ২০ টার মতন। খুব ভালো রিপ্লাই ছিল ১০/১১  টা। আমি কখন ভাবিনি UConn এ যাবার কথা যেহেতু আমার প্রোফাইল অনুযায়ী এটা হাই র‍্যাংকড। কিন্তু এখানে প্রায় হয়েই গিয়েছিল ফান্ড। তাই চেষ্টা করে দেখতে কোন ক্ষতি নেই। ইমেইল করে রাখতে ক্ষতি নেই। এমনো হয়েছে আমি ইমেইল করেছি অক্টোবরে আর ভালো রিপ্লাই পেয়েছি ফেব্রুয়ারিতে। তাই রিপ্লাই না পেলেও হতাশ হবেন না। হয়তো পরে রিপ্লাই পাবেন। আর গাদা গাদা রিপ্লাই দিয়ে তো লাভ নেই। ৩/৪ টা খুব ভালো রিপ্লাই ই যথেষ্ট ফান্ড পেতে। কিন্তু এরজন্য নিয়মিত ইমেইল করে যাবেন। পাশাপাশি কিছু সেন্ট্রালিও এপ্লাই করে রাখতে পারেন হাতে টাকা থাকলে। ইমেইল নিয়ে আমার মতামত হচ্ছে ইমেইলের কোয়ালিটি এভারেজ রেখে প্রচুর প্রফেসর কে রিচ করাটাই বেটার। কারণ বেশি কোয়ালিটি মেন্টেইন করতে গিয়ে আপনি যদি অল্প প্রফেসর কে রিচ করেন তবে আপনার ভালো রিপ্লাইয়ের সম্ভাবনা কমতে থাকবে। প্রফেসর স্টুডেন্ট না পেলে ভালো ইমেইল ধুয়ে পানি খাবেনা বরং হাতে যে অপশন থাকবে ওটাকেই কাজে লাগাবে। তাই প্রফেসরের লিস্টে চলে যান বেশি বেশি ইমেইল করে। 

আমি যেখান থেকে খুব ভালো রিপ্লাই পেয়েছিঃ

১। West Virginia University (Civil Engg)

2. Texas State University (Applied Geo)

3. UTRGV (Civil Engg)

4. University of Central Florida (Civil Engg)

5. Southern Illinois University Carbondale (Geoscience)

6. University of New Orleans (Earth Science)

7. Saint Louis University (GIS)

8. University of Texas Permian Basin (Geoscience)

9. University of Connecticut (Environment)

10. Missouri S&T (Geology)

11. Uni of Maryland Eastern shore (Geosciences)


এর পাশাপাশি এভারেজ মানের রিপ্লাই বেশ 

কয়েকটা জায়গা থেকে পেয়েছি।

ফল ২২ এ যেখানে এপ্লাই করেছিঃ

১। টেক্সাস স্টেট (Admitted, no funding)

২। টেক্সাস টেক (Admitted, partial tuition waiver)

৩। সেইন্ট লুইস ইউনিভার্সিটি, Missouri (এডমিশন উইথ ফুল ফান্ডিং Alhamdulillah)

৪। SUNY ESF (Rejected)

৫। University of Texas Permian Basin (free application) (Admitted, no funding)

৬। Utah State Uni (Phd) (Rejected)

৭। Southern Illinois University Carbondale (Admitted, was in the waiting list for funding)


কিছু বাস্তবতার কথাঃ

আমি একটু আর্লি বিয়ে করি থার্ড ইয়ারেই। ফোর্থ ইয়ারে আমার একটা বেবি ছিল। তাই এটা মনে করার কোন কারণ নেই আমার জার্নিটা খুব ইজি ছিল। আমার বাবা একটা মাদ্রাসার টিচার। আমাদের এমন কোন প্রোপার্টিও নেই যে সেলফ ফান্ডে আসব। এই পুরো সময়টাতে আমার বাবা মা ও স্ত্রী তাদের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ মেন্টাল সাপোর্ট দিয়ে গিয়েছে। কিন্তু টাকা পয়সার যোগান কিন্তু আমার নিজেকেই করতে হয়েছে। জিয়ারি আইয়েলস থেকে শুরু করে ইউনিতে এপ্লাই সব নিজের টাকায় করেছি পাশাপাশি সংসারও চালিয়েছি। স্ত্রী সন্তানকে অনেক কিছু কিনে দিতে পারিনি। অনেক মনোকষ্টেও ছিলাম এসব নিয়ে। প্রেসারও ছিল নিজের মাঝে কিছু একটা করার যেহেতু সময় যাচ্ছিল ধীরে ধীরে। কিন্তু আমি হাল ছাড়িনি। আমি খুব মিনিমালিস্টিক লাইফ লিড করি। তবে সে সময়টাতে আরো মিনিমালিস্টিক ছিলাম। কেও হয়তো বিশ্বাস নাও করতে পারে আমি ২/৩ বছরে কোন নতুন জামা কাপড় জুতা কিনিনাই। জব থেকে যা সেভিংস ছিল তা সব শেষ হয়ে গিয়েছে। এরপরেও ইউএসে আসতে গিয়ে ফুল ফান্ড থাকা সত্যেও ভিসা, সেভিস, এয়ার টিকেট, প্রথম মাসের খরচ, সেভিস এসবের জন্য অল্প কিছু ধারকর্যও নিতে হয়েছে। আশা করি সময় মত এগুলো পরিশোধ করে দিতে পারব।

তাই যাদের বাপের টাকা নেই, সিজিপিএও কম তারা হতাশ হবেন না। চেষ্টা চালিয়ে যান। সময়টা কঠিন। তবে স্মার্টলি পরিশ্রম করলে ও আল্লাহর কাছে চাইলে আপনার স্কলারশিপ হবে। তবে পরিশ্রমটা একটু স্মার্টলি করবেন। গৎবাঁধা কাজ করলে লো সিজিপিএ দিয়ে মাস্টার্সে ফান্ড পাওয়া টাফ হবে।


নিজের সিদ্ধান্তঃ 

আপনি বাইরে যাবেন কিনা তা আপনার নিজের সিদ্ধান্ত। আরেকজন কেবল পরামর্শ দিতে পারে। তাই কেও যদি ভয় দেখায় বা হতাশ করে তাদের কথায় কান দিবেন না। তাদের দেয়া ডিমোটিভেশন গুলোকে ভুল প্রমাণ করতে আপনি যদি উঠে পড়ে লাগেন তবেই আপনি ভুল প্রমাণ করতে পারবেন এবং নিজের ফান্ড সিকিউর করতে পারবেন ইনশা আল্লাহ। আবার দেশে থাকাও আপনার সিদ্ধান্ত। দেশেও ভালো করা সম্ভব। তাই আরেকজন যাচ্ছে বলেই আপনাকে যেতে হবে এমন না। নিজে চিন্তা করে সিদ্ধান্ত নিন অতপর তার উপর কাজ করুন। সফলতা আসবে। না আসলে আরেকটা পরিকল্পনা করুন। তা নিয়ে এগিয়ে যান। থেমে থাকবেন না।


পার্টঃ ২ [ এ অংশ ছোট আছে, দ্রুত পড়া যাবে]

আমার ইউনিভার্সিটি অর্থাৎ Saint Louis University (SLU) এর গ্রাজুয়েট টিচিং/ রিসার্চ এসিট্যান্ট ফান্ডিং সম্পর্কে কিছু কথাঃ

জানিনা সামনে ব্যস্ত হয়ে গেলে কতটুকু লিখতে পারব। তাই সামনের Fall 23 টার্গেট করে যারা USA তে মাস্টার্স করতে আসতে চাচ্ছে তাদের জন্য ভাবলাম এ বিষয়েও একটু অল্প করে লিখে ফেলি।

শুধু মাস্টার্সের কথা এজন্যে বললাম যে সেন্ট লুইস ইউনিভার্সিটিতে মাস্টার্সের গ্রাজুয়েট এসিস্ট্যান্টশিপ ফান্ডিং যথেষ্ট ভালো (অন্তত STEM program গুলোতে)। এটা প্রায় পিএচডির কাছাকাছি এমনকি কিছু কিছু ইউনিভার্সিটির পিএচডির সমান ও হতে পারে। যেমন আমাদের প্রোগ্রামে মাস্টার্সের মান্থলি ফান্ডিং ২০০০ ডলার। তবে এটা ভাবার কারণ নাই যে পিএচডি আবার মাস্টার্সের ডাবল। এখানে পিএচডি এবং মাস্টার্সের ফান্ডিং ডিফারেন্স টা যে খুব বেশি এমন না।

সেন্ট লুইস একটা প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি যা USA এর মিযৌরি অংগরাজ্যের সেন্ট লুইস শহরে অবস্থিত। প্রাইভেট বলে মন খারাপ করবেন না। কারণ আমেরিকায় পাব্লিক প্রাইভেটের কোন ডিস্ক্রিমিনেশন নেই। হার্ভার্ড, এম আই টি এগুলোও প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি। সেন্ট লুইস শহরে আরো বেশ কয়েকটা ইউনিভার্সিটি আছে। যেমন- Washington University St. Louis (WashU), University of Missouri St. Louis (UMSL), Webster University etc. এদের মধ্যে WashU সবচেয়ে ভালো। এরপরে SLU। তবে SLU বেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বিশেষত আমাদের GIS ফিল্ডে Taylor Geospatial Institute খুম চমকপ্রদ কাজ করছে। নেটে সার্চ করলেই দেখতে পাবেন।

তাছাড়া আমি ব্যক্তিগতভাবে SLU এর মেডিক্যাল সেক্টরের বেশ প্রশংসা শুনেছি। সব ডিপার্ট্মেন্টই যে ভালো হবে এমন না বাট কারো আগ্রহ থাকলে তার ফিল্ড নিয়ে যাচাই করে দেখতেই পারে।

মজার বিষয় হচ্ছে, যারা টাকা পয়সার অভাবে আছেন তারা ইমেইল করে এপ্লিকেশন ফি ওয়েভারও পেয়ে যেতে পারেন। আমি এখানে কোন ফি ছাড়াই এপ্লাই করেছিলাম। আমি ইমেইলে ফিনান্সিয়াল ক্রাইসিস মেনশন করে ওয়েভার আছে কিনা জানতে চাওয়ায় ওরা কুপন কোড দিয়েছিল যা কাজে লাগিয়ে আমি ফ্রিতে এপ্লাই করি। উল্লেখ্য আমার প্রোগ্রামে এপ্লাই করতে GRE ও লাগেনি।

পরিশেষে বলব, যারা মাস্টার্সেই আসতে চান তারা SLU তে একটু নিজ নিজ ফিল্ডে খোজ নিয়ে, ইমেইল করে এখানে আসার ট্রাই করতেই পারেন। আপনি বা আপনারা আসলে বাংলাদেশি কমিউনিটি টা আরো শক্তিশালি হবে।

 

সতর্কতাঃ কেও যদি দেখেন আপনার ফিল্ডে ফান্ড কম বা নেই তবে আমাকে বকাবাদ্য করবেন না কারণ আমি আমার নিজ ফিল্ড এবং অন্যান্য অল্প কিছু ফিল্ডের আলোকে কথাগুলো বললাম। এতে যদি কারো উপকার হয় ভালো লাগবে।

আজকে এ পর্যন্তই। আরো অনেক কিছুই লেখার ছিল। কিন্তু সব মনেও নেই আর অনেক সময়ও লাগবে লিখতে। তাছাড়া এত বড় লেখা পড়া বিরক্তের কারণ হতে পারে। তাই আজ ক্ষান্ত দিচ্ছি। পরে কখনো কোন টিপস এন্ড ট্রিক্স মাথায় এলে লিখব। আমার লেখা পড়ে কারো যদি উপকার হয় তবেই এ লেখাটা স্বার্থক হবে।

কেও কিছু জানতে চাইলে ইনবক্স না করে এখানে কমেন্টবক্সে বলবেন। এতে সবার উপকার হবে। বা অন্য কেও জানলে সেও রিপ্লাই দিতে পারবে।


আল্লাহ হাফেয

শেখ আসিফ

MS in GIS (Saint Louis University, MO, USA)

Post a Comment

Previous Post Next Post